ই–পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে ই–পাসপোর্ট চালু করেছে । এখন যে কেউ ঘরে বসে নিজেই নিজের জন্য ই–পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন। ঘরে বসে ই–পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে কী লাগে, ই–পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম ও ১০ বছর মেয়াদে ই-পাসপোর্ট খরচ এবং কত দিনে পাওয়া যায় ইত্যাদি সম্পর্কে জানা জরুরি।

কেননা, একটি ই–পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়া বা (সাবমিট করা) পর যদি দেখেন, কোথাও ভুল হয়, তাহলে আপনি তা চাইলে ও সংশোধন করার সুযোগ পাবেন না। সেই সঙ্গে, একটি ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে একবারই ই–পাসপার্টের জন্য আবেদন করা যায়।
নতুন নিয়মে ই-পাসপোর্টের আবেদন
বর্তমানে ই-পাসপোর্ট বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি আধুনিক ও নিরাপদ পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করছে। এটি মেশিন-রিডেবল পাসপোর্টের তুলনায় অধিক নিরাপদ ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। নতুন নিয়মে ই-পাসপোর্টের আবেদন করার প্রক্রিয়াটি আগের তুলনায় আরও সহজ ও সুবিধাজনক করা হয়েছে।
ই-পাসপোর্টের আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা জন্মনিবন্ধন সনদ: আবেদনকারীর পরিচয় যাচাই করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ আবশ্যক।
২. পুরানো পাসপোর্ট (যদি থাকে): যদি পূর্বে কোনো মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) থাকে, তবে সেটির কপি দিতে হবে।
৩. ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্য: আবেদনকালে ছবি তোলা হবে এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিস স্ক্যান প্রদান করতে হবে।
৪. আবেদন ফি পরিশোধের রশিদ: ই-পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে এবং সেই সংক্রান্ত রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া
নতুন নিয়মে ই-পাসপোর্টের আবেদন করার ধাপসমূহ নিম্নরূপ:
১. অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ
ই-পাসপোর্টের জন্য প্রথমেই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এর জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.epassport.gov.bd/) এ প্রবেশ করুন।
আবেদনকারীর তথ্য প্রদান করুন:
নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, পিতামাতার নাম ইত্যাদি তথ্য প্রদান করুন।
জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন নম্বর প্রদান করুন।
আগের পাসপোর্ট থাকলে সেটির তথ্য প্রদান করুন।
পাসপোর্টের ধরন নির্বাচন করুন:
সাধারণ (৪৮ পৃষ্ঠা, ৫ বা ১০ বছর মেয়াদি)
জরুরি (এক্সপ্রেস বা সুপার এক্সপ্রেস)
২. আবেদন ফি পরিশোধ
ই-পাসপোর্টের জন্য ফি অনলাইনে অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা যায়। সাধারণত ফি নির্ধারিত হয়:
সাধারণ প্রসেসিং (১৫-৩০ কার্যদিবস): ৪৮ পৃষ্ঠার জন্য ৪,০২৫ টাকা
জরুরি প্রসেসিং (৭-১০ কার্যদিবস): ৪৮ পৃষ্ঠার জন্য ৬,৩২৫ টাকা
সুপার এক্সপ্রেস (৩ কার্যদিবস): ৪৮ পৃষ্ঠার জন্য ৮,৬২৫ টাকা
৩. বায়োমেট্রিক ডাটা প্রদান
অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণের পর নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় অনুযায়ী পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি ও আইরিস স্ক্যান প্রদান করতে হবে।
৪. আবেদন যাচাই ও অনুমোদন
বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবেদন যাচাই করবে। যদি কোনো ভুল বা অসঙ্গতি পাওয়া যায়, তবে আবেদনকারীকে সংশোধনের জন্য জানানো হবে।
৫. পাসপোর্ট সংগ্রহ
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে গেলে আবেদনকারীকে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। তারপর নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিস থেকে নিজে উপস্থিত হয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।
১০ বছর মেয়াদ ই-পাসপোর্ট ফি
বাংলাদেশে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ফি পাসপোর্টের পৃষ্ঠাসংখ্যা এবং ডেলিভারির ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। নিচে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হলো:
১৮ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের উপরে বয়সী আবেদনকারীরা শুধুমাত্র ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের Google News Follow করুন
ই-পাসপোর্টের আবেদন ও ফি সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে পারেন।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা-
১. উন্নত নিরাপত্তা: ই-পাসপোর্টের মধ্যে থাকা ইলেকট্রনিক চিপ হ্যাকিং ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
২. বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা: ই-পাসপোর্ট আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি হওয়ায় এটি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে স্বীকৃত।
3. স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন সুবিধা: ই-পাসপোর্টধারীরা বিমানবন্দরে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
4. দ্রুত প্রসেসিং: ম্যানুয়াল পাসপোর্টের তুলনায় ই-পাসপোর্ট দ্রুত তৈরি ও বিতরণ করা হয়।
ই-পাসপোর্টে সতর্কতা ও পরামর্শ
১/ আবেদন ফর্মে ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
২/ পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র ও পূর্ববর্তী পাসপোর্ট সঙ্গে আনতে হবে।
৩/ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি দেওয়ার সময় নির্ধারিত ড্রেসকোড মেনে চলা উচিত।
৪/ অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণের সময় নির্ভুল তথ্য প্রদান করতে হবে।
শেষ কথা
ই-পাসপোর্টের নতুন নিয়ম নাগরিকদের জন্য অধিক সুবিধাজনক ও দ্রুত সেবা নিশ্চিত করেছে। এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে সহজতর করার পাশাপাশি নিরাপত্তা ও গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করলে দ্রুত ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।