ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর জীবনী এবং সম্মাননা পুরস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনী ও সম্মাননা পুরস্কার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য এবং আলোচনা। তাঁর অবদান ও সাফল্য সম্পর্কে জানুন।

 ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, সমাজসেবক এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী। ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন। দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য।

ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনী

মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাজী দুলু মিয়া ছিলেন একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং মা সাফাত বেগম ছিলেন গৃহিণী। ইউনূসের পরিবার শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে বড় হয়, যা তাঁর ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলে।

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে স্নাতক এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর শিক্ষকতা জীবন

পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি টেনেসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে থাকাকালীন সময়েই দেশের গ্রামীণ দারিদ্র্য তাকে নাড়া দেয় এবং এর সমাধানে কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন।\]

ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ

১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় ডঃ ইউনূস লক্ষ্য করেন যে, অতি ক্ষুদ্র অংকের ঋণ পেলে গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। তিনি প্রথমে নিজের অর্থ দিয়ে কয়েকজন দরিদ্র মহিলাকে ঋণ দেন। এই প্রাথমিক উদ্যোগ থেকেই ক্ষুদ্রঋণের ধারণা জন্ম নেয়। ১৯৭৬ সালে "গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প" শুরু হয় এবং ১৯৮৩ সালে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়।

গ্রামীণ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য ছিল জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা, বিশেষ করে গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের। ডঃ ইউনূস বিশ্বাস করতেন, "দারিদ্র্য ইতিহাসের জাদুঘরে যাবে।" তাঁর এই মডেল দ্রুত বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায় এবং বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি চালু হয়।

ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর সম্মাননা  নোবেল শান্তি পুরস্কার সহ প্রায় ১৪৫টি পুরুষ্কার অর্জন করেন-

২০০৬ সালে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংককে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। নোবেল কমিটি তাদের বক্তব্যে বলে, "দারিদ্র্য নির্মূলের জন্য ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন।" এই অর্জন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরও মর্যাদাপূর্ণ করে তোলে।

ডাক্তার মোহাম্মদ ইউনুস এর সম্মাননা পুরুষ্কার

১৯৭৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ড. মোহাম্মদ ইউনূস  সাহেব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহ প্রায় ১৪৫টি পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড (১৯৭৮),রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৮৪), কেন্দ্রীয় ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৫), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৭),

আগা খান অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৯), কেয়ার পুরস্কার (১৯৯৩), নোবেল পুরস্কার (শান্তি) (২০০৬), মানবহিতৈষণা পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৩), মুহাম্মদ সাহেবুদ্দিন বিজ্ঞান (সামাজিক অর্থনীতি) পুরস্কার, শ্রীলংকা (১৯৯৩), রিয়াল এডমিরাল এম এ খান স্মৃতি পদক,বাংলাদেশ (১৯৯৩), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার,যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৪), পিফার শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৪),

ড. মুহাম্মাদ ইব্রাহিম স্মৃতি স্বর্ণ পদক, বাংলাদেশ (১৯৯৪), ম্যাক্স সছমিধেইনি ফাউন্ডেশন ফ্রিডম পুরস্কার, সুইজারল্যান্ড (১৯৯৫), ঢাকা মেট্রোপলিটন রোটারারি ক্লাব ফাউন্ডেশন পুরস্কার, বাংলাদেশ (১৯৯৫), আন্তর্জাতিক সাইমন বলিভার পুরস্কার (১৯৯৬), ভ্যানডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় বিশিষ্ট আলামনাই পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৬), আন্তর্জাতিক একটিভিটিস্ট পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৭),

প্লানেটরি কনশিয়াশনেস বিজনেস ইনোভেশন পুরস্কার, জার্মানি (১৯৯৭), হেল্প ফর সেলফ হেল্প পুরস্কার,নরওয়ে (১৯৯৭), শান্তি মানব পুরস্কার (ম্যান ফর পিস এওয়ার্ড), ইতালি (১৯৯৭), বিশ্ব ফোরাম পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৭), ওয়ান ওয়ার্ল্ড ব্রডকাস্টিং ট্রাস্ট মিডিয়া পুরস্কার, যুক্তরাজ্য (১৯৯৮) ,দ্যা প্রিন্স অফ আউস্তুরিয়া এ্যাওয়ার্ড ফর কনকর্ড, স্পেন (১৯৯৮), সিডনি শান্তি পুরস্কার, অস্ট্রেলিয়া (১৯৯৮),

 অযাকি (গাকুডো) পুরস্কার, জাপান (১৯৯৮), ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার, ইন্ডিয়া (১৯৯৮), জাস্টটি অফ দ্যা ইয়ার পুরস্কার,ফ্রান্স (১৯৯৮) ,রোটারারি এ্যাওয়ার্ড ফর ওয়ার্ল্ড আন্ডারস্ট্যান্ডিং, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৯), গোল্ডেন পেগাসাস এ্যাওয়ার্ড, ইটালি (১৯৯৯), রোমা এ্যাওয়ার্ড ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান, ইটালি (১৯৯৯), রাথিন্দ্রা পুরস্কার, ইন্ডিয়া (১৯৯৮), অমেগা এ্যাওয়ার্ড অফ এক্সিলেন্সি ফরব লাইফ টাইম এচিভমেন্ট, সুইজারল্যান্ড (২০০০), এ্যাওয়ার্ড অফ দ্যা মেডেল অফ দ্যা প্রেসিডেন্সি,ইটালি (২০০০),

 কিং হুসেইন হিউম্যানিটারিয়ান লিডারশীপ এ্যাওয়ার্ড, জর্ডান (২০০০), আই ডি ই বি গোল্ড মেডেল এ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ (২০০০), আরতুসি পুরস্কার, ইটালি (২০০১), গ্র্যান্ড প্রাইজ অফ দ্যা ফুকুওকা এশিয়ান কালচার পুরস্কার, জাপান (২০০১), হো চি মীণ পুরস্কার, ভিয়েতনাম (২০০১), 

নিত্য নতুন তথ্য পেতে Google News Follow দিয়ে সাথে থাকুন

Google News

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পুরস্কার 'কাজা ডি গ্রানাডা', স্পেন (২০০১), নাভারা ইন্টারন্যাশনাল এইড এ্যাওয়ার্ড, স্পেন (২০০১), মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (২০০২), বিশ্ব টেকনলজি নেটওয়ার্ক পুরস্কার, যুক্তরাজ্য (২০০৩), ভলভো পরিবেশ পুরস্কার, সুইডেন (২০০৩),

জাতীয় মেধা পুরস্কার, কলম্বিয়া (২০০৩), দ্যা মেডেল অফ দ্যা পেইন্টার অসওয়াল্ড গুয়ায়াসামিন পুরস্কার, ফ্রান্স (২০০৩), তেলিছিনকো পুরস্কার, স্পেন (২০০৪), সিটি অফ অরভিতো পুরস্কার, ইটালি (২০০৪), দ্যা ইকোনমিস্ট ইনোভেশন পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (২০০৪), ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল অ্যাওয়ার্ড, যুক্তরাষ্ট্র (২০০৪), লিডারশিপ ইন সোশ্যাল অন্টাপ্রিনেয়ার অ্যাওয়ার্ড, যুক্তরাষ্ট্র (২০০৪)।

তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া

ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর অন্যান্য উদ্যোগ

ডঃ ইউনূস শুধু ক্ষুদ্রঋণেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি "সোশ্যাল বিজনেস" বা সামাজিক ব্যবসার ধারণা প্রবর্তন করেন, যেখানে ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য থাকে সামাজিক সমস্যার সমাধান করা, মুনাফা নয়। এ ধারণা থেকে জন্ম নেয় "গ্রামীণ ড্যানোন", "গ্রামীণ ফোন", "গ্রামীণ শক্তি" ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান।

তাঁর লেখা বই "Banker to the Poor" (দরিদ্রের ব্যাংকার) এবং "Building Social Business" বিশ্বব্যাপী পাঠকের মনোযোগ কেড়েছে। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণের ওপর বক্তব্য রাখেন।

ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর ব্যক্তিগত জীবন

ডঃ ইউনূসের ব্যক্তিগত জীবন সাধারণ এবং অনাড়ম্বর। তাঁর প্রথম স্ত্রী বেগম আফরোজ ইউনূসের সাথে বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি ভেরা ফরবর্গকে বিয়ে করেন। তাঁর একমাত্র কন্যা মোনিকা ইউনূস একজন খ্যাতিমান অপেরা সঙ্গীতশিল্পী।

ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর সমালোচনা ও বিতর্ক

যদিও ডঃ ইউনূসের অবদান অসামান্য, তবে তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাকে ঘিরে ঋণগ্রহীতাদের উপর ঋণের বোঝা, সুদের হার নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাঁর অপসারণ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও দেখা দেয়। তবে তাঁর অবদানের তুলনায় এই বিতর্কগুলো গৌণ বলে মনে করা হয়।

শেষ কথা

ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন আমাদের দেখায়, একজন মানুষের উদ্যোগ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে বিশ্বজুড়ে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, অর্থনীতি কেবল সংখ্যার খেলা নয়, এটি হতে পারে মানবতার সেবার একটি হাতিয়ার। তাঁর কাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করে সমাজের অবহেলিতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।


Getting Info...
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.